যেভাবে শুরু হয়েছিল আমার ফ্রিল্যান্সিং যাত্রা:
2012 সাল; ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি IITB Bogra থেকে তবে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি পাচ্ছি না। কিন্তু আমি টেকটিউনস এ অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত ব্লগ লিখতাম এবং পড়তাম। তাই নিজের বিপদে টেকটিউনস এ একটি ব্লগ লিখলাম যার শিরোনাম দিলাম, "আমাকে আশার আলো দেখে দিন আমাকে বাঁচার রাস্তা দেখে দিন"। অনেকেই টিউমেন্ট করলো, "আপনাকে চাকুরী দিব, আমার সাথে যোগাযোগ করুন ইত্যাদি ইত্যাদি"। এর মধ্যে প্রিন্স নামে এক বড়ভাই টিউমেন্ট করলো, "আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন কিন্তু এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে অনেক ধর্য। আপনি SEO, HTML শিখে ওডেস্কে কাজ শুরু করতে পারেন"। ওই সময় চারদিকে ক্লিকের বন্যা বইছে, যেমন: ডুলেন্সার, স্কাইলান্সার, দ্বীপাক্ক। উনার কথা শুনে মনে হলো ওডেস্ক মনে হয় ভাল, টাকা দেয় মনে হয়। তখন ফ্রিল্যান্সিং কি আমি বুঝতাম না কিন্তু যেহেতু আগেই ওডেস্কে একাউন্ট করা ছিল তাই ওডেস্কে বিড করা শুরু করে দিলাম আর্টিকেল মার্কেটিং, রাইটিং এর উপর। প্রথম সপ্তাহেই একটি ফিক্সইড জব পেয়ে গেলাম এবং ঐ জব থেকে আয় হলো $110 ডলার। খুব উৎসাহিত হয়ে রেগুলার বিড করতে লাগলাম এবং তারপরের সপ্তাহে পিন্টারেস্ট মার্কেটিং এর একটি ঘন্টাভিত্তিক জব পেলাম। এখান থেকে আমার $150 ডলার আয় হয়। আমি এইসময় বেক্সিমকোতে ডেনিম ডাইং সেক্টরে জব করতাম। ফ্রিল্যান্সিং শুরুর প্রথম মাসেই বেশ কয়েকটি জব পাই এবং বুঝতে পারি, আমার অনলাইন ক্যারিয়ার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। তাই বেক্সিমকোর চাকুরী বাদ দিয়ে বাসায় চলে আসলাম এবং বাসায় এসে পুরোদমে ওডেস্ক নিয়ে বসে গেলাম।
যায়দিন ভালো, আসে দিন খারাপ:
2013 সাল; ওডেস্কে প্রায় 40 এর অধিক কাজ শেষ করেছি কিন্তু এর মধ্যেই ওডেস্ক একাউন্টটি সাসপেন্ড হয়ে গেলো। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। ওডেস্ক সাপোর্টে কথা বললাম; ওরা কিছুতেই আমার একাউন্ট রিএক্টিভ করে দিবে না। এমনকি তারা বলছেও না কেন আমার একাউন্টটি সাসপেন্ড করা হলো। আমিও পিছপা হবার ছেলে না; ইল্যান্স এবং ফ্রিল্যান্সার ডট কমে দুইটা একাউন্ট খুলে ফেললাম এবং ওডেক্স বাদ দিয়ে ইল্যান্স এবং ফ্রিল্যান্সার এ কাজ শুরু করে দিলাম। মাস তিনেক পর এক ক্লাইন্টের সাথে ঝামেলা হয়ে ইল্যান্স আকাউন্টিও হারতে হয়। তাই আবার ওডেস্কে ব্যাক করলাম এবং সাথে ফ্রিল্যান্সার ডট কমেও কন্টিনিউ কাজ করে গেলাম।
নতুন কিছু ভাবছি:
2014 সাল; ওডেক্সে নতুন একাউন্টে আবার 20 এর অধিক কাজ শেষ করেছি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের উপর এবং ফ্রিল্যান্সার ডট কমেও ভালো পজিশন। কিন্তু ভাবছি আমি অনেক কষ্ট করে ক্যারিয়ার তৈরি করি কিন্তু ওরা আমার একাউন্ট সাসপেন্ড করে আমার ক্যারিয়ার ধসে দেয়। তাই আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে কেউ আমার ক্যারিয়ার ধসে দিতে না পারে।
ইকোমার্স বিজনেস:
একটি ডোমেইন কিনে ফেললাম এবং যার নাম দিলাম বেস্ট সোশ্যাল প্লান ডট কম। নিজে যে সকল কাজ পারি ওইসব কাজের উপর ভিত্তি করে নিজেই একটি সার্ভিস ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেললাম। তারপর নিজেই অনপেজ SEO করে অফপেজ SEO শুরু করে দিলাম। প্রায় 3 মাস SEO করার পর ওয়েবসাইটের রাঙ্কিং পেয়ে গেলাম। অর্ডার আশা শুরু হয়ে গেল এবং প্রথম মাসে আয় হলো $500 ডলার। দ্বিতীয় মাস থেকেই আয় দাঁড়ালো $2200 ডলারের উপর। তখন বুঝতে পারলাম; আমার আর ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে কাজ করতে হবে না। তাই বাদ দিয়ে দিলাম ওডেস্ক এবং ফ্রিল্যান্সার ডট কমে বিড করা। তারপর বেস্ট সোশ্যাল প্লানে ফুলটাইম সময় দেওয়া শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ! এখন আমার 25 এর অধিক সার্ভিস পেজ গুগল প্রথম পেজে এবং আর্নও অনেক গুন বেড়েছে। আর্ন নিয়ে আর কথা না বলি; কারণ আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি পার্মানেন্ট ক্যারিয়ার তৈরি করা।
দিন সারাজীবন ভালো কাটে না:
2015 সাল; একদিন বগুড়া যাচ্ছি আমার এক বন্ধু হিমেলের সাথে। হিমেল আমার বাইক ফেজার ড্রাইভ করতেছিল এবং আমি ওর পিছনে বসা। দিনটি খুব খারাপ ছিল কিন্তু বুঝতে পারিনি আমরা। ট্রাকের সাথে আমাদের একসিডেন্ট হয়ে গেল। হিমেল একসিডেন্ট এর সাথে সাথে মারা গেল যাকে বলে স্পট ডেড। আমাকে প্রথমে শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতালে এবং অবস্থার অবনতি হলে আমাকে নেওয়া হয় ঢাকা এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাথায় এবং পায়ে আঘাত পেয়ে মাথার খুলি এবং ডান পা ভেঙে গিয়েছিল। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই আমার মাথা এবং পা অপারেশন করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে অপারেশন করার পর আমি আউট অফ ডেঞ্জার হলেও বাম চোখটি চিরতরে হারিয়ে ফেলি। তবুও আমি হাল ছেড়ে দেয়নি। ওই সময় বালিশে হেলান দিয়ে কাজ করে যেতাম এবং নিজের আয় করা টাকায় নিজের ট্রিটমেন্ট করাতাম। কিন্তু এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হওয়া অপারেশনে আমার পা জোড়া লাগেনি তাই বগুড়া প্রাইম ক্লিনিকে আরো দুইটা অপরেশনের পর আমার পা জোড়া লাগে। আলহামদুলিল্লাহ! এখন ভালো আছি এবং কাজও কন্টিনিউ করে যাচ্ছি।
সর্বশেষ এবং কিছু টিপস:
আলহামদুলিল্লাহ! এতকিছুর পরও ঝরে পড়িনি অনলাইন থেকে। যেহেতু মার্কেটপ্লেস এর বাহিরে কাজ করি তাই নিজেই পেমেন্টগুলো একসেপ্ট করতে হয়। আমার হাতে এখন 3500+ ফরেন ক্লাইন্ট তাই আমাকেই পেপ্যাল এ পেমেন্ট একসেপ্ট করতে হয়। ক্লায়েন্টদের গিফট করা পেপ্যাল একাউন্ট বেশিবার সময় ব্যবহার করি। কিন্তু মাঝে মাঝে ফেক পেপ্যাল একাউন্ট ও ব্যবহার করতে হয়। তাই পেপ্যাল মাঝে মাঝেই একাউন্ট সাসপেন্ড করে দেয়। এর পরও আবার নতুন করে চলতে হয়। বিয়ে করেছি, বাচ্চা হয়েছে তাই বাচ্চার একটি সুন্দর ক্যারিয়ার তৈরি করে দেবার জন্য প্রতিনিয়ত অনলাইনে যুদ্ধ করে যাচ্ছি।
আপনারা যারা মার্কেটপ্লেস এ কাজ করেন তারা নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন যে আপনিও পারবেন ভালকিছু করতে। ক্লায়েন্টদের সাথে স্ট্রং কমিউনিটি করুন এবং ক্লাইনদেরকে আপনার সর্বোচ্চ ভালো কাজ উপহার দিন এবং আপনার ক্যারিয়ার পার্মানেন্ট নিশ্চিত করুন।
যারা মার্কেটের বাহিরে কাজ করেন তারা আমাজান এফিলিয়েট করতে পারেন অথবা নিজে যে কাজগুলো পারেন তার উপর ভিত্তি করে আমার মতো সার্ভিস ওয়েবসাইট বানিয়েও আর্ন করতে পারেন। ভালো থাকবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।
আমার সাথে যোগাযোগ:
ফেইসবুক প্রোফাইল: https://www.facebook.com/InternetSagor
ফেইসবুক পেজ: https://www.facebook.com/netsagor
টুইটার: https://twitter.com/netsagor
লিংকেডিন: https://www.linkedin.com/in/netsagor/
ওয়েবসাইট: https://www.netsagor.com/
|
ফেইসবুক পেজ: https://www.facebook.com/netsagor
টুইটার: https://twitter.com/netsagor
লিংকেডিন: https://www.linkedin.com/in/netsagor/
ওয়েবসাইট: https://www.netsagor.com/
No comments:
Post a Comment